পদ্মার চরে বাদাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

Saturday, August 7, 2010


কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, পাবনার ঈশ্বরদী ও সুজানগর এবং নাটোর জেলার লালপুরে পদ্মার বিসত্মীর্ণ চরে এখন বাদাম চাষ হচ্ছে। বাদাম চাষ করে আনেক চাষি ভাগ্য বদল করেছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা শুকিয়ে যায়। দুই তীরের বিশাল চরের মাঝ দিয়ে পদ্মার ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হয়।

আগে পদ্মার চরে কাঁশ বাগানে ঢেকে থাকত। তারপর পদ্মা তীরের চাষিরা চরে চাষাবাদ শুরম্ন করে। বেলে মাটিতে প্রথমে দুই চারজন চাষি বাদাম চাষ শুরম্ন করে। বাদাম চাষে সফলতা দেখে অন্য চাষিরাও বাদাম চাষে নেমে পড়ে। রূপপুর গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি সে ২০ বছর ধরে বাদাম চাষ করছেন। এক সময় ৮০ বিঘা জমিতেও বাদামের চাষ করেছেন। এবার ৪ বিঘাতে চাষ করেছেন। বাদাম চাষ কমিয়ে দিয়ে চাখ চাষ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে পদ্মা চরে আখের চাষ দ্রুত বাড়ছে। হার্ডিঞ্জ রেলসেতু থেকে অনেক পদ্মার চরের মালিক রেলওয়ে। এ জমি রেলওয়ে বছর ভিত্তিতে লিজ দিয়ে থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের ক্যাডাররা রেলের কাছ থেকে কম মূল্যে জমি লিজ নিয়ে চড়া মূল্যে চাষিদের কাছে লিজ দেয়। প্রতি বিঘার জন্য লিজ বাবদ পার্টির লোকদের বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। হার্ডিঞ্জ সেতুর ভাটির জমি সরকারের খাস জমি। এ জমিও সবসময় দলীয় ক্যাডাররা দখল করে থাকে। তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে চাষিরা চাষাবাদ করে থাকে। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘাতে বাদাম চাষে ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিঘাতে ১০-১১ মন বাদাম উৎপাদন হয়। বিক্রি করে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় হয়।

সরেজমিনে পদ্মা চরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, নতুন বাদাম উঠতে শুরম্ন করেছে। ক্ষেত থেকে বাদাম তোলার কাজ করে নারী শ্রমিকেরা। পাকশীর নারী শ্রমিক মিনা বেগম জানায়, এক মণ বাদাম তুলে একশ’ টাকা মজুরি পেয়ে থাকে। আনজু বেগম জানায়, তারা বাদাম তুলে দিনে এক দেড়শ টাকা মজুরি আয় করে থাকে। চাষিরা জানায়, এবার খরায় বাদামের ক্ষতি হয়েছে। অনেক ড়্গেত খরায় শুকিয়ে যায়। লক্ষ্মীকুন্ড, দাদপুর ও পাকশীর চরেও বিপুল পরিমাণ বাদামের চাষ হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, এবার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার চরে ১৬শ’ ১২ বিঘাতে, সুজানগর উপজেলার চরে ১৫শ’ ৩৭ বিঘাতে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরে ১৮শ’ ৭৫ বিঘাতে ও লালপুর উপজেলার চরে ৬ হাজার বিঘাতে বাদাম চাষ হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, বছরে লাভ দেখে এ বছর রবি মৌসুমে চাষি অধিক মাত্রায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগরের আরিফুল ইসলাম জানান, রামকৃষ্ণপুর, মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারি ইউনিয়নের চরে ১০-১২ বছর ধরে বাদাম চাষ হচ্ছে। তিনি এবার ৫০ বিঘাতে বাদাম চাষ করেছেন। ফলন ভালই হচ্ছে। বিঘা প্রতি ১০-১২ মণ ফলন। প্রতিমণ বাদাম ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা চরে হাজার তিনেক বিঘাতে আখ চাষ হয়েছে। আখ চাষ বাড়ছে। বর্ষা আসার আগেই বাদাম উঠে যায়। কিনত্মু আখ চাষে ঝুঁকি থাকে। বর্ষা বেশি হলে আখ ক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। লালন শাহ সেতুর ভাটিতে পদ্মায় একটি কোল পারাপারের জন্য একটি সেতু তৈরি করলে আরো বিসত্মীর্ণ চরে আখ চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। আর এতে পাবনা চিনিকলে আখ সংকট থাকবে না বলে চাষিরা জানায়। চর এলাকায় চাষাবাদের উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাবনার উপ পরিচালক মোঃ জামান আজম জানান, ঢাকা-১, বিনা-১, বিনা-২, বিনা-৩ ও ঝিঙ্গা জাতের বাদামের চাষ হয়ে থাকে। চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষ বাড়ছে। লালপুরের চাষিরা বাদামের বীজ উৎপাদন করে থাকে। বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা বীজ কিনে নিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র : দি-এডিটর

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন